\"Writing.Com
*Magnify*
SPONSORED LINKS
Printed from https://www.writing.com/main/view_item/item_id/2226271--
Item Icon
Rated: E · Short Story · Romance/Love · #2226271
It's a fiction short story

(সকল চরিত্র কাল্পনিক, বাস্তবে কারো সাথে মিলে গেলে কেউ দায়ী নয়)
কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে ইমতিয়াজ। সেখানে আরবি হরফে লেখা “লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদ রাসুল্লুল্লাহ”। তার একটু উপরের ডান পাশের ফ্রেমে জাতির জনক বংবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদাকালো ছবি, বাম পাশের ফ্রেমে শেখ সাহেবের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ফোনের মাঝে একনাগারে কথা বলে যাচ্ছে রাইসুল।
শোনেন, এই রাইসুল- মায়ের কসম খেয়ে বলছে, ওমরাহ করতে আমি এক টাকাও বেশী নেই না। প্যাকেজের সাথে ফ্রি তে ফেমাস ওভারসীজের পক্ষ থেকে এক প্যাকেট খেজুর আর এক লিটার জমজমের পানি আমরা হাদিয়া হিসাবে দেই। এই ঢাকাতে এমন অফার অন্য কেউ দেয় না। একটু চুপ থেকে কিছুটা আসতে আসতে বলে উঠে, ভাই দেখেন আমি আবারো কসম খেয়ে বলছি আগের ফ্লাইটটা মিস হইতো না। সব ঠীক আসিলো। শুধু একটু ঝামেলা হয়ে গেসিলো। এইবার আর তারিখ মিস হইবো না। এই রাইসুল আপনারে কথা দিয়ে দিসে। এই মাসের শেষে আপনার মায়ের ওমরাহর ফ্লাইট হইবো। আচ্ছা ভাই শোনেন নতুন করে আমি টিকিট কাইটা দিতাসি, কিছু টাকা বেশী লাগবো। ঐটা আমি দিয়া দিমু। আপনে খালি খালাম্মারে ফল ফ্রুটস খাওয়ান। মক্কা মদিনায় অনেক কাজ তার। একটু শক্তি দেশ থিকা খাওয়া দেন।
ইমতিয়াজ বসে আছে তার স্কুল বন্ধু রাইসুলের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ফেমাস ওভারসীজে। রাইসুল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আর পড়াশুনা করে নাই। তবে এখন সে মস্ত বড় ব্যবসায়ী। আদমের ব্যবসা করে।
ফোন রেখে রাইসুল, ইমতিয়াজকে বলে, সরি বন্ধু, আগে হজ্বের ব্যবসা করতাম না। কিন্তু এখন করি। করতে ভালো লাগে। আদম ব্যবসায় কিছুটা দুই নম্বরি করে ফেলি, সেই পাপ মোচন করি হজ্বে লোক পাঠায়া। থাউজ্ঞা, এসব শুইনা তোমার লাভ নাই। বলো কি খাবা।
কিছু খাবো না, তুই ম্যানেজ করেছিস?
আরে বন্ধু এই গরীবের এইখান থেকে কেউ না খেয়ে যায় না। এই যে ক্ষুদ্র প্রানী মশা, তাকেও আমি রক্ত খাওয়ার পারমিশন দেই। রক্ত খাওয়ার পরে মেরে ফেলি। আগে আমি মারি না। আমার এই রুম থেকে কাউকে না খাওয়ায় বিদায় করি না আমি। ঐ কুদ্দুস, কুদ্দুস…
তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকে অর্ধ বেকা হওয়া এক মাঝবয়েসী পুরুষ। স্যার আমারে ডাকসেন?
যা সামনের দোকান থেকে কলিজা সিঙ্গারা নিয়া আয় ৪ টা। আর সাথে রাস্তার ঐ পাশ থেকে পেঁপের জুস আনবি। কবি চিনি যেনো কম দেয়। আর শোন , হাত ধুয়ে বানাইতে কবি। কুদ্দুস বের হয়ে যায় রুম থেকে।
ইমতিয়াজ তাকিয়ে আছে রাইসুলের দিকে। রাইসুল আমার টিকিটের কি খবর।
রাইসুল দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে বলে, দোস্ত আমি চেষ্টা করতাসি। হইয়া যাইবো।
এভার ইমতিয়াজ কিছুটা চিন্তিত হয়েই জিজ্ঞেস করে, রাইসুল তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিস? আমার টিকিট লাগবেই।
রাইসুল বলে, আরে আমি রাইসুল থাকতে তুমি ক্যান টেনশন করো। আমি তো আসি। লাগলে টিকিট পয়দা দিবো। তুমি বসো মাথা ঠান্ডা করে। নেও সিগারেট ধরাও। ইমতিয়াজ নিজের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরায়। রাইসুল বলে, বন্ধু তোমার চিকন মাইয়াগো সিগারেট দেও একটা খাই। দেখি ক্যামন লাগে।
সিগারেট ধরিয়ে রাইসুল বলে, দোস্ত একটা কথা কই, রাগ কইরো না।
ইমতিয়াজ তাকিয়ে আছে রাইসুলের দিকে। আচ্ছা দোস্ত শোনো সামনের নির্বাচনে কি বিএনপি আইবো।
রাইসুল, আমার টিকিটের আপডেট দে। তুই কি বুঝতে পারছিস, টিকিট আমার দরকার। এর মাঝেই কুদ্দুস রুমে ঢুকে। একটা প্লেটে চারটা সিঙ্গারা, সাথে কাঁচা মরিচ, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আর ৪ পিস শশা।
নেও বন্ধু বিসমিল্লাহ বইলা খাও। এই মতিঝিল এলাকার বেস্ট কলিজা সিঙ্গারা।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সিঙ্গারা মুখে নেয় ইমতিয়াজ। কারন ইমতিয়াজ যানে, এখান থেকে কোনো ভাবেই না খেয়ে বের হওয়া যাবে না। ইমতিয়াজ সিঙ্গারা মুখে দিয়ে দেখে সিঙ্গারাটা আসলেই অন্যরকম। আর তার ক্ষিদাও পেয়েছে। সিঙ্গারা খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরিয়েছে ইমতিয়াজ। রাইসুলের দিকে প্যাকেট বাড়িয়ে দিলে তা নেয় না রাইসুল। সে তার গোল্ডলিফের প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে তাতে টান দেয়।
হটাত করেই নিচের ড্রয়ার খুলে একটা খাম বের করে ইমতিয়াজের হাতে দেয় রাইসুল। ইমতিয়াজ প্যাকেট খুলে দেখে আজ রাত ৯ ঃ২৫ মিনিটের ঢাক-কলকাতা দুইটা ফ্লাইটের টিকিট। ইমতিয়াজ তাকিয়ে আছে রাইসুলের দিকে।
রাইসুলের চোখ জ্বলজ্বল করছে। ইমতিয়াজ বুঝতে পারছে রাইসুলের কাছে এখন মনে হচ্ছে সে পানি পথের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধ জয়ী হয়েছে। রাইসুল এখন মুঘল সম্রাট বাবর। সরি আদম সম্রাট রাইসুল।
ইমতিয়াজ টাকা বের করছে, এই ফাঁকে রাইসুল ক্যালকুলাটারে হিসাব কসছে। টাকা দিয়ে ইমতিয়াজ রাইসুলের কাছ থেকে বিদায় নিতে উঠে।
আজ যাই দোস্ত, কিছু কাজ বাকি আছে।
রাইসুল কিছুটা অভিযোগের সুরেই বলে, দোস্ত এরপর থেকে একটু টাইম দিও প্লিজ, এভাবে টিকিট পাওয়া টাফ। তাওতো এবার তোমার কাছ থেকে কমিশনের ৫ পারসেন্ট নিলাম। দুই পারসেন্ট ডিসকাউন্ট দিলাম। শুধু রুপা ভাবির জন্যে। ইমতিয়াজ হাসি দিয়ে ফেমাস ওভারসীজ থেকে বের হয়।
ঘড়িতে দেখে প্রায় তিনটা বাজে। ইমতিয়াজ রুপাকে ফোন দেয়। কয়েকবার রিং বাজার পরই রুপা ফোন ধরে।
হুম, বল।
রুপা কই তুই?
আমি জাহান্নামে, আসবি তুই?
নাহ, মেজাজ খারাপ ক্যান, দুপুরে খেয়েছিস?
মেজাজ ঠীক আছে, হুম খাইসি, বল ফোন দিসিস ক্যান।
এমনেই রে। তোর অফিস শেষ কখন।
প্রায় প্রতিদিন যখন শেষ হয়।
রুপা তোর কি মেজাজ খুব বেশী খারাপ। ওকে তাইলে রাখি।
আরে ভাই বললাম তো, মেজাজ ভালো, আর কিছু বলবি?
নাহ
ওকে তাইলে রাখি, অফিসে অনেক প্যারা। কয়েকটা কাজ বাকি এখনো। পরে ফোন দিচ্ছি।
ইমতিয়াজ ভাবে,আরো কিছুক্ষন রাইসুলের ওখানেই থাকা যেতো। ইমতিয়াজ রিক্সা নিয়ে নিউমার্কেট আসে। সেখানে ঘুরে ঘুরে ছয়টা টি-শার্ট কিনে। সাথে দুইটা ব্রাশ কিনে, দুইটা বড় তোয়ালে কিনে। আরো কিছু টুকটাক জিনিষ কিনে একটা ট্রাভেল ব্যাগে সব ঢুকিয়ে বাসায় রওনা দেয়।
বাসায় এসেই বেডরুমে ঢুকে ইমতিয়াজ। বিয়ের পর থেকেই ইমতিয়াজ আর রুপা একটা ট্র্যাভেল লাগেজ বানিয়েছে। যেখানে তিনদিনের ট্যুরের প্রায় সব কিছুই গোছানো থাকে। ইমার্জেন্সি কোথাও যেতে হলে যেনো কোনো সমস্যা না হয় তাই এই কাজ করেছে তারা। সেই ব্যাগ নিয়ে আর কাঁধের একটা ব্যাগপ্যাক নিয়ে বের হয়ে যায় ইমতিয়াজ।
রওনা দেয় রুপার অফিসের উদ্দেশে। কিছুক্ষনের মাঝেই সিএনজি পেয়ে যায় ইমতিয়াজ। সিগারেট টানতে টানতেই ইমতিয়াজ মনে মনে একটা ট্যুর প্ল্যান করে ফেলে। ঢাকা থেকে কলকাতা। হোটেল আগে থেকেই বুকিং দেয়া। এরপরের দিন সারাদিন কলকাতা সাইট সিয়িং এবং টুকটাক শপিং। এরপরের দিন শান্তি নিকেতন। সেদিনই কলকাতা শহরে ব্যাক করে পরেরদিন মুভি দেখা, শপিং করা। ভাবতে ভাবতেই সিএনজি মামা ডাক দেয় ইমতিয়াজকে। স্যার আইয়া পরসি?নামবেন না?
ইমতিয়াজ ভাড়া দিয়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এক কাপ চিনি ছাড়া চা অর্ডার করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি। রুপার অফিস টাইম প্রায় শেষ। চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই, রুপার ফোন।
হ্যালো রুপা,
ইমতিয়াজ কই তুই?
আমি তোর অফিসের বাইরের চায়ের দোকানে।
এখানে কি করিস? আচ্ছা শোন আমার অফিস প্রায় শেষ। আমি বের হবো। পনেরো মিনিট অপেক্ষা কর। আর শোন এখন থেকে ঠীক ১৪ মিনিট পর এক কাপ চায়ের অর্ডার দিবি।
ওকে। রাখি বাই।
ফোন পকেটে ঢুকিয়ে ইমতিয়াজ চিন্তা করতে থাকে, রুপাকে বলা হয় নাই এখান থেকে তাকে নিয়ে ডিরেক্ট এয়ারপোর্ট যাওয়া হবে। রুপা জানে না এই ব্যাপারে কিছুই। এক বছরের ভিসা নিয়েছিলো দু’জনে। ভিসা পাবার পর কলকাতায় ঘুরতে গিয়েছিলো, কিন্তু সেবার আবহাওয়া খারাপ থাকায় ভালো করে ঘুরতে পারে নাই তারা। ভিসার মেয়াদ আছে আর মাত্র দের মাস। তাই সারপ্রাইজলি তাকে নিয়ে ইমতিয়াজ ঘুরতে যাবে কলকাতা। গতকাল রাতেই ইমতিয়াজ পাসপোর্ট ব্যাগে ভরে রেখেছে। ইমতিয়াজের চিন্তার কারন একটাই, চার দিনের ছুটি আগেই নিয়ে রেখেছে সে, কিন্তু রুপা ছুটি নেয় নাই। নিবেই বা ক্যান....সে তো এই পরিকল্পনা জানেই না। অবশ্য কাল তাদের ডে অফ পরশু রুপা আগের একটা পাওনা ডে অফ নিবে। আর এক্সট্রা ছুটি নিতে হবে দুই দিন। প্রথমে ত্যারামি করলেও খুব খুশি মনেই ছুটি নিবে রুপা সেটা ইমতিয়াজ জানে। ইমতিয়াজ ঘড়ি দেখে, রুপার বের হতে আরো ছয় মিনিট।
ইমতিয়াজ আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দেয়।
ভাবতে থাকে, এইতো আর সাত ঘন্টা পরে নতুন যে দিনটি আসবে সেটি তাদের কাছে খুব স্পেশাল। কত চরাই উৎরাই পেড়িয়ে নতুন সংসার শুরু করেছিলো তারা।
ইমতিয়াজ রুপার অফিসের কালো লোহার স্টিলের বড় গেটটির দিকে তাকিয়ে আছে..............

© Copyright 2020 Seoul Ahmed (seoulahmed at Writing.Com). All rights reserved.
Writing.Com, its affiliates and syndicates have been granted non-exclusive rights to display this work.
Printed from https://www.writing.com/main/view_item/item_id/2226271--